বুঝে বুঝে বায়োলজিঃ
তো আমরা আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন মানে সেটা পরীক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ আবার দেহের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি হরমোন নিয়ে কথা বলবো!
হরমোনটির নাম হলো ADH(anti diuretic hormone) বা ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোন…
আসলে আমাদের দেহে রক্তের আয়তন এবং পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে হরমোনটি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে
এখন তাহলে দেখি হরমোনটি কিভাবে কাজ করে?
প্রথমেই আমরা জেনে রাখি আমাদের দেহ সবসময়ই চেষ্টা করে দেহে যেন রক্ত বা পানির পরিমাণ সবসময় নির্দিষ্ট থাকে! ঠিক এজন্যই দেহে পানি বা রক্তের পরিমাণ কম বেশি হলে এসব হরমোন কাজ করা শুরু করে আর সত্যি বলতে এদের কাজই দেহের রক্ত বা পানির ভারসাম্য রক্ষা করা।
তাহলে ধরো কোন কারণে আমাদের দেহে যখন রক্তের আয়তন কমে যায় বা দেহে পানির পরিমাণ কমে যায়(একই জিনিস আসলে কারণ পানির পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে রক্তের আয়তন এমনিই বাড়বে বা কমবে কারণ রক্তরসের ৯০-৯২% পানিই থাকে)
তখন মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে নিউরনের অ্যাক্সনের মাধ্যমে পশ্চাৎ পিটুইটারী গ্রন্থিতে এই ADH হরমোনটি এসে জমা হয়ে থাকে পরে সেই জায়গা থেকে হরমোনটি রক্তের মাধ্যমে বৃক্কের নেফ্রনের উপর কাজ করে পানি পুনঃশোষণ (এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ছাঁকন প্রক্রিয়ায় রক্ত থেকে যে জিনিসপত্র ক্যাপসুলার স্পেসে জমা হয় তার কিছু অংশ আবার দেহে ফিরে যায়) বাড়িয়ে দেয় অর্থাৎ অনেক কম গ্লোমেরুলার ফিলট্রেট তথা অনেক কম মূত্র উৎপন্ন হয়..এবং মূত্রটি অনেক ঘন হয়!!কারণ কম আয়তনে বেশি জিনিস থাকলে তা ঘন হবেই!
এখানে কম আয়তন বলতে বুঝিয়েছি কম তরল আর বেশি জিনিস(আপেক্ষিকভাবে) হলো মূত্রের উপাদান!!তাহলে তো ঘন হবেই।
এখন এই ক্ষেত্রে এই হরমোনটি না থাকলে কি হত!!

আসলে না থাকলে আমরা মারা যেতাম! কিন্তু কিভাবে!?আসলে ধরো আমাদের দেহে কোন কারণে তরল কমে গেছে কিন্তু আমাদের বৃক্ক সেই আগের হিসাব মতেই মূত্র উৎপন্ন করছে তাহলে কি হতো দেহে এমনিই তরলের অভাব আবার তার থেকে তরল আরও দেহ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে মানে বিষয়টা মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতো হতো!!তাই দেহ যতটুকু সম্ভব কম তরল দেহ থেকে বের করে দিতে চায় এজন্যই এই হরমোন ক্ষরণ করে!তাহলে বুঝতেই পারছো কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই হরমোন!
আর হরমোনটার নামের সাথেও কিন্তু এর কাজ মানানসই!দেখো অ্যান্টি ডাইয়ুরেটিক হরমোন.. আমরা জানি ডাইয়ুরেসিস মানে বেশি বেশি মূত্র উৎপন্ন করা তাহলে অ্যান্টিডাইয়ুরেসিস মানে কি দাঁড়ালো!?মানে কম মূত্র উৎপন্ন করবে তাই তো!!তাহলে যে হরমোন এই কাজটা করে তাকে কি বলবে??অবশ্যই অ্যান্টিডাইয়ুরেটিক হরমোনই তো বলবে!নাকি!!

এখন ধরো কোন কারণে দেহে যদি পানির পরিমাণ বা রক্তের আয়তন বেড়ে যায় তাহলে কি হবে!
আর কি হবে এতক্ষণ যা যা বললাম সবটার উল্টোটা হবে!
মানে দেহে তরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে ADH কম ক্ষরিত হবে বৃক্কের নালিকা বা নেফ্রন থেকে কম তরল দেহে ফিরে যাবে মানে বেশি মূত্র উৎপন্ন হবে!!সিম্পল!
কারণ দেহে যদি বেশি তরল থাকে, স্বাভাবিকের তুলনায় যে অতিরিক্ত তরল থাকে তাকে তো বের করতে হবে দেহ থেকে নাকি!! সেই অতিরিক্ত তরলকেই অতিরিক্ত মূত্র হিসেবে বের করে দেওয়া হয়!তাহলে এখানে মূত্র অনেক বেশি হবে এবং কমে ঘন হবে! কেন কম ঘন হবে তোমরাই বলে যাও!??!
আর যেহেতু ADH এর কাজ ছিলো দেহে তরলের পরিমাণ বাড়ানো কিন্তু এক্ষেত্রে তো এমনিই তরলের পরিমাণ অনেক বেশি তাহলে কি আর বাড়ানোর দরকার আছে!?অবশ্যই নাই!তাই এক্ষেত্রে ADH কম ক্ষরিত হয়!
তাহলে গাণিতিকভাবে বিষয়টা দেখি,
ADH সমানুপাতিক টু পানির পুনঃশোষণ অর্থাৎ দেহে তরল বাড়লে পানির কম পুনঃশোষণ দরকার তাই ADH কম ক্ষরিত হয় আর দেহে পানির পরিমাণ কমলে ঠিক তার উল্টোটা হয়ে থাকে!
এখন বাস্তব চিত্র দিয়ে আমরা পুরো বিষয়টি বুঝি,কিছুদিন আগেই তো রোজা গেলো সেহরির সময় আযান দেওয়ার আগে আমরা প্রচুর পরিমাণ পানি খেয়েছি পারলে বালতি ভর্তি করে পানি আমরা পান করেছি কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই প্রচুর পরিমাণ মূত্র ত্যাগের সাথে বারবার টয়লেটে যেতে হয়েছে আমাদের কারণ কি!!?কারণ এটাই যে যখন আমরা যখন পানি পান করি অনেক বেশি তখন তখন দেহে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় ফলে ADH কম ক্ষরিত হয় ফলে প্রচুর পরিমাণ মূত্র উৎপন্ন হয়…একদম উপরের মেকানিজমটাই চলতে থাকে!
তাহলে সবাই বলো তো ইফতারের আগে মূত্র ত্যাগ করলে কেন কম মূত্র উৎপন্ন হবে?
আশা করি বুঝতে পারছো।
ধন্যবাদ।
আব্দুর রউফ উল্লাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ। লেখক,নিউরন জিকে+ইংলিশ
1 responses on "ইফতারের আগে মূত্র ত্যাগ করলে কেন কম মূত্র উৎপন্ন হবে? | উল্লাস ( ঢামেক)"
Leave a Message
You must be logged in to post a comment.
Wow! That’s great